অভিজ্ঞ ও তারুণ্যনির্ভর যে কমিটি হচ্ছে

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক করার মধ্য দিয়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা কার্যত আগামী দিনের রাজনীতি ও ভোটের লড়াইয়ের লক্ষে সুসংগঠিত তারুণ্যনির্ভর সংগঠন গড়ে তোলার কমিটি উপহার দিচ্ছেন। দলের সভানেত্রী পদে শেখ হাসিনা আবার নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। তিনি বারবার নতুন নেতৃত্বর কথা বললেও এখন পর্যন্ত তার বিকল্প তিনিই রয়েছেন। তাই নেতাকর্মীরা তাদের আবেগ অনুভূতি ভালোবাসা ও আনুগত্য বিশ্বাসবোধ থেকে তাকে আজীবন সভাপতি থাকার আবেদন জানিয়েছেন। ৩৫ বছরের টানা উত্থান পতনে সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক কঠিন চ্যালেঞ্জের বৈরী স্রোতের বিপরীতে শেখ হাসিনা সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরেই আরোহণ করেননি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ৭০ বছরের কোটায় এসে এখনও তিনি শারীরিকভাবে যেমন ফিট তেমনি অভিজ্ঞতায় পরিপক্বতায় দূরদর্শিতায় অনেক প্রাজ্ঞ। সেই সঙ্গে ১৮ ঘণ্টা রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে শ্রম দিতে পারেন। সবাই বলছেন অ্যারাবিয়ান ব্ল্যাক হর্সের মতো ক্ষিপ্র গতিতে তিনি ছুটেন। বিগত দু’বারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তার স্নেহধন্য ও দলের কর্মীদের কাছে সম্মানিত হলেও সংগঠন গোছাতে সেই গতিতে ছুটতে পারেননি। ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচন ও আগামী দিনের রাজনীতির যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংগঠন শক্তিশালী করার লক্ষেই বয়সকে ধরে রাখা ও কঠোর পরিশ্রমের অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ওবায়দুল কাদেরকেই দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রানিং মেট নির্বাচিত করেছেন। বুধবার রাতে ওবায়দুল কাদেরকে যখন দলের দায়িত্ব অর্পণের সিদ্ধান্ত জানান তখন তিনি তার নেত্রীকে সালাম করে দোয়া চাইলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। এমন সময় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ তার কক্ষে প্রবেশ করলে তিনি তাদের বলে দেন, এই সিদ্ধান্ত নেতাকর্মীদের জানিয়ে দিতে যাতে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে কোন ভুল বোঝাবুঝি না হয়।

এবারের কাউন্সিলে প্রেসিডিয়াম সদস্যপদে ১৯ জনের ঠাই হতে যাচ্ছে। এদের মধ্যে প্রবীণের জায়গা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে সম্পাদক মণ্ডলী থেকে কর্মঠ নেতাদের কেও কেও জায়গা পাচ্ছেন। বর্তমান প্রেসিডিয়াম থেকে বাদ পরতে যাচ্ছেন অ্যাড. সাহারা খাতুন ও নূহ উল আলম লেনিন। আব্দুল লতিফ সিদ্দিকি বহিষ্কারে ও সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিনের মৃত্যুতে তার পদটি শূন্য রয়েছে। প্রেসিডিয়ামে নতুন যে ৮ জনের ঠাই হতে যাচ্ছে তাদের মধ্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, লে. কর্নেল অব. ফারুক খান, ড. আব্দুর রাজ্জাক, ডা. দিপু মনি, নুরুল ইসলাম নাহিদ, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, আসাদুজ্জামান নূর, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, তালুকদার আব্দুল খালেক, খায়রুজ্জামান চৌধুরী লিটন, বদর উদ্দিন কামরানের নাম শোনা যাচ্ছে।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় প্রজন্ম, প্রধানমন্ত্রী পুত্র হার্ভার্ড পাশ আইটি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয় ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদের পুত্র সোহেল তাজের অভিষেক ঘটতে পারে। এদের দু’জনেরই মেধাবী প্রযুক্তি নির্ভর তারুণ্যের উপর প্রভাব রয়েছে। সজীব ওয়াজেদ জয়ের এদেশে প্রযুক্তি বিপ্লবের অগ্রনায়ক হিসেবে সুনাম রয়েছে। সোহেল তাজের একজন সৎ, আদর্শিক, কমিটেড নেতার যোগ্য পুত্র হিসেবে রয়েছে ক্লিন ইমেজ। আগামী দিনের রাজনীতিতে এদের ঘিরে তারুণ্য নির্ভর সুসংগঠিত সংগঠন করার কমিটিই আসছে বলে নানা সূত্র আভাস দিয়েছে।

দলের পরিক্ষিত ওয়ার্কিং কমিটির যোগ্য, দক্ষ কর্মীবান্ধব সংগঠকদের যাদের ক্লিন ইমেজ তাদের কারও কারও পদন্নোতি ঘটতে পারে। বিতর্কিত কেউ কেউ বাদ পরছেন। ক্লিন ইমেজের তরুণদের অনেকের সম্পাদক মণ্ডলীতে ঠাই হতে যাচ্ছে। নতুনের মধ্যে জুনাইদ আহমেদ পলক, নসরুল হামিদ বিপু, ইকবালুর রহিম, মইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, বাহাদুর ব্যাপারী, অজয় কর খোকন, লিয়াকত শিকদার, নজরুল ইসলাম বাবু, সাইফুজ্জামান শেখরদের নাম জোরেশোরে বইছে।

নারী নেতৃত্বের হার বাড়ছে এবারে। সেখানে মেহের আফরোজ চুমকি, তারানা হালিম, সেগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, মাহবুব আরা গিনি, অ্যাড. নূরজাহান মুক্তা, অ্যাড. ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি, খুজিস্তা নূর-ই-নাহারিন মুন্নী, মারুফা আক্তার পপিদের নাম আলোচিত হচ্ছে।

৭৫’র উত্তর ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখা, শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে সারাদেশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী মৃণাল কান্তি দাস সহ-দপ্তর থেকে পূর্ণ দপ্তর সম্পাদক ও অসীম কুমার উকিল পূর্ণ প্রচার সম্পাদক হতে যাচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর